সুন্দরবনে আগুন: অতিরিক্ত তাপমাত্রাই কারণ


 বাংলাদেশের দক্ষিণে সুন্দরবনের আগুন তিন দিনেও নেভেনি৷ বনবিভাগ আর ফায়ার
সার্ভিসের লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও এখনো বনের ভিতরে ধিকি
ধিকি আগুন জ্বলছে৷ তবে আগুনের প্রকৃত কারণ জানতে গঠন করা হয়েছে তদন্ত
কমিটি৷





ম্যানগ্রোভ অরণ্য
সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালী ক্যাম্পসংলগ্ন পয়ষট্টি ছিলা এলাকায়
গত বুধবার বিকেলে আগুন লাগে৷ আগুনে অন্তত পাঁচ একর বনভূমি পুড়ে গেছে বলে
খবর৷ আগুন লাগার পর পরই বনবিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন
নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন৷ তাঁরা মূলত ‘লাইন অফ ফায়ার' কেটে দিয়ে আগুন
যাতে ছাড়াতে না পারে, সেই চেষ্টাই করেন৷ বনবিভাগ জানায়, বুধবার বিকেলে
চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায় বনের ভেতরে বনকর্মীরা ধোয়ার কুণ্ডলী দেখে আগুন লাগার
বিষযটি বুঝতে পারেন৷



সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবন পূর্ব
বিভাগের যেসব এলাকায় প্রতিবছর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে, গুলিশাখালীর ওই এলাকা
এর মধ্যে অন্যতম৷ তিনি জানান, এবারে আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া
যায়নি৷ তবে বনের সাত-আট একর এলাকা জুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে৷ এতে ঝোপ, লতা ও
গুল্মজাতীয় কিছু গাছ পুড়ে গেছে৷ তিনি আরো জানান, সাধারণত ‘লাইন অফ ফায়ার'
কেটে দিয়েই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়৷ চারপাশে যাতে আগুন ছড়িয়ে পড়তে না পারে,
এ জন্য যেসব লতা-গুল্ম এবং ঘাস জাতীয় উদ্ভিদের মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে –
তা কেটে দেয়া হয়৷



বাগেরহাটের
মোরেলগঞ্জ উপজেলা ফায়ার স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা মো. আরিফুল হক জানান,
বনের প্রায় সাত-আট একর এলাকাজুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে আগুনের ধোঁয়া কুণ্ডলী
পাকিয়ে উপরে উঠছে৷ যেখানেই ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে, সেখানেই পানি ছিটানো
হচ্ছে৷ তিনি বলেন, আগুনের কারণ সম্পর্কে এখনো তাঁরা নিশ্চিত নন৷ ক্ষয়ক্ষতি
নিরূপণে তদন্ত কমিটি কাজ করছে৷




বনবিভাগ জানায়, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের বনভূমির
উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশে কিছু নীচু এলাকায় প্রায় প্রতিবছর বসন্তের শেষে ও
গ্রীষ্মকালের শুরুতে তীব্র বাতাস ও দাবদাহে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে৷ এই নীচু
এলাকায় বর্ষাকালে পানি জমে, শীতকালে শুকিয়ে যায়৷ সব এলাকায় সাধারণত গুল্ম,
ঘাস, লতাপাতা ও ঝোপজাতীয় গাছ রয়েছে৷ সারা বছর গাছের পাতা ঝরে পানিতে পড়ে
আধা পঁচা পাতার স্তর তৈরি হয়৷ শুকনো মৌসুমে পানি শুকিয়ে গেলে ঝরা পাতার এই
স্তরের ভাঁজে মিথেন গ্যাস জমে৷ এ অবস্থায় প্রখর সূর্যতাপ বা বনজীবীদের
ব্যবহৃত আগুন থেকে বনের এ সব এলাকায় আগুন লাগে৷



দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল জানান,
তীব্র দাবদাহই বনের আগুনের কারণ৷ তবে আগুনের উৎস না থাকলে আগুন লাগে না৷
গাছের গুড়িতে ঘর্ষণের কারণে আগুনের সৃষ্টি হতে পারে৷ আবার কারুর ফেলে দেয়া
দাহ্য পদার্থের কারণেও আগুন লাগতে পারে৷ মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হলেই যে আগুন
লাগবে – তা নয়৷ আগুনের উৎস ছাড়া আগুন লাগার কোনো কারণ নেই৷ এছাড়া এই আগুন
কখনো কখনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেও লাগানো হতে পারে বলে মনে করেন তিনি৷ এ
জন্যই এর সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন৷



তিনি জানান, বনে এই আগুন লাগার ঘটনা সারা বিশ্বেই ঘটে৷ বিশেষ করে
অস্ট্রেলিয়ার বনে সর্বগ্রাসী এই আগুন দাবানল নামে পরিচিত৷ সুন্দরবনে প্রায়
প্রতিবছরই এ ধরণের আগুনের খবর পাওয়া যায়৷ তবে এই আগুন মোকাবেলায় সুন্দরবনের
বনকর্মী এবং স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেই বলে
জানান তিনি৷


DW.DE



Disclaimer:

This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.

No comments:

Post a Comment