বর্তমানে আমাদের পাশের দেশ ভারতের সিনেমা ও সংস্কৃতি আমাদের প্রভাবিত করছে দারুণ ভাবে। শুধু আমাদেরই না, হলিউডের পর বলিউড দখল করে নিয়েছে আর্ন্তজাতিক সিনেমা অঙ্গন। যদিও বলিউডের ব্যবসায়িক চলচ্চিত্রগুলোর শৈল্পিক মান নিয়ে চলচ্চিত্রবোদ্ধা ও সমালোচকদের নাক সিটকানো ভাব রয়েছে। এবং সেটা অমূলকও নয়। তথাপি বলিউডেও তৈরি হচ্ছে দারুন সব চলচ্চিত্র। এইতো গত বছর পূর্ণ হলো বলিউডের একশো বছর। আর এ উপলক্ষে এনডি টিভি বাছাই করেছিলো এ যাবৎ বলিউডের ৫টি সেরা ছবি। আসুন জেনে নেই সর্বকালের সেরা ৫ টি বলিউড চলচ্চিত্রের কথা।
৫। দো বিঘা জামিন:
‘দো বিঘা জামিন’ বাঙালি চলচ্চিত্রকার বিমল রায়ের হিন্দি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র। এটি ১৯৫৩ সালে মুক্তি লাভ করে। সলিল চৌধুরীর ছোট গল্প থেকে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি ইটালিয়ান নিওরিয়ালিস্টিক ঘরানার ভিত্তিরিও দে সিকা’র Bicycle Thieves (1948) সিনেমা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করেন বিমল রায়।
শাম্ভু মাহেতো নামের কৃষকের স্ত্রী পার্বতী আর ছেলে কানহাইয়্যাকে নিয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল দুই বিঘা জমি রক্ষা করতে জীবনযুদ্ধের চিত্রিত রূপ ‘দুই বিঘা জামিন’। আশা-নিরাশা আর স্বপ্ন-হতাশা ও প্রাপ্তির গল্পের বুনটে এই চলচ্চিত্র জয় করে নিয়েছিলো 7th Cannes Film Festival (1954) এ Prix International পুরস্কার সহ বেশ কয়টি জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পুরস্কার।
৪। দো আঁখে বারা হাত:
হিন্দি চলচ্চিত্র পরিচালক ভানকুদরে শান্তারাম পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মানবিক মনোস্তাত্বিক গল্প নিয়ে নির্মিত। 8th Berlin International Film Festival এ ‘দো আঁখে বারা হাত’ জিতে নেয় সিলভার বিয়ার আর এটিই প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র যা জয় করে নেয় গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ড স্যামুয়েল গোল্ডউইন এ্যাওয়ার্ড ক্যাটাগরিতে। ছয় বন্দীকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টার গল্পকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই চলচ্চিত্র ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায়।
৩। মাদার ইন্ডিয়া:
আমেরিকান লেখক ক্যাথেরিন মায়োস এর ভারতীয় সমাজ, ধর্ম ও সংস্কৃতি বিষয়ক বই ‘মাদার ইন্ডিয়া’ পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে পরিচালক মেহবুব খান তাঁরই আরেক চলচ্চিত্র আওরাত (১৯৪০) এর রিমেক করেন ১৯৫৭ সালে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ নামের এই চলচ্চিত্রটি। নার্গিস, সুনীল দত্ত, রাজেন্দ্র কুমার, রাজকুমারের অসাধারণ অভিনয় এই চলচ্চিত্রের প্রাণ।
প্রতিকূল সমাজ ও পরিস্থিতিতে একজন দারিদ্র্যপীড়িত মহিলার তার সন্তানদের নিয়ে নিজের আদর্শে টিকে থাকার গল্প নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে প্রথম ১৯৫৮ সালে দ্য একাডেমি এ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ফরেইন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম শাখায় প্রতিযোগিতা করার অনুমোদন পায়। এছাড়াও মূখ্য অভিনেত্রী নার্গিস এবং পরিচালক মেহবুব খান বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পদক লাভ করেন এবং প্রশংসিত হন।
২। পিয়াসা:
ভারতের স্বাধীনতা উত্তর অস্থির সময়ের এক ব্যর্থ কবির জীবন সংগ্রামের গল্প নিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা গুরু দত্ত তৈরি করেন ‘পিয়াসা’। এস ডি বর্মণের সুরকৃত মোহাম্মদ রাফির কণ্ঠে অসম্ভব সুন্দর বেশ কিছু গান রয়েছে এই সিনেমায়। গুরু দত্ত পরিচালনার পাশাপাশি মূল চরিত্রে অভিনয়ও করেন। গুলাব নামের পতিতার চরিত্রে ওয়াহিদা রেহমান অভিনয় করে বেশ প্রশংসিত হন। টাইম ম্যাগাজিনের ‘সর্বকালের সেরা ১০০ সিনেমা’র তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলো ‘পিয়াসা’।
১। লগান:
এই চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে আপনারা সকলেই হয়তো কম বেশি জানেন। পরিচালক আশুতোষ গুয়ারিকের রচনায় ও পরিচালনায় ‘লগান’ একটি এপিক স্পোর্টস ড্রামা। বক্স অফিসে আলোড়ন তোলা এই চলচ্চিত্রে রয়েছে আমির খান, গ্রেসি সিং এর দুর্দান্ত অভিনয় আর এ আর রহমানের সুর করা চমৎকার সব গান।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা ক্রিকেট খেলে, এই খেলা যেন শুধু খেলা নয় শোষকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সংগ্রাম, অলিখিত প্রাণপণ যুদ্ধ।
১২ ফেব্রুয়ারি, ২০০২ এ লগান মনোনিত হয় বেস্ট ফরেন ল্যাঙুয়েজ ফিল্ম ক্যাটাগরিতে একাডেমি এ্যাওয়ার্ড নমিনেশন অনুষ্ঠানে। এছাড়াও প্রচুর জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পদকে ভূষিত হয় লগান চলচ্চিত্রটি। ভারতীয় চলচ্চিত্রে এটি নতুন ইতিহাস তৈরি করে।
Disclaimer:
This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.
No comments:
Post a Comment