জীবন নিয়ে শঙ্কা




গত কয়েকদিন আগে আমার কলেজ জীবনের খুব ঘনিষ্ট এক বন্ধু আমার পুরাতন বাংলালিংক নম্বরে ফোন দিয়েছে। ওই নম্বরটি এখন মায়ের কাছে থাকে। অনেক প্রশ্নের পরে মা যখন নিশ্চিত হলেন, সে আমার বন্ধু হতে পারে, তখনই নাকি মা তাকে আমার নতুন নম্বরটা দিয়েছে। বন্ধু সাইফুদ্দিন ফোন দিয়ে আমার কাছে জানতে চাইল, “তোর মা তোকে নিয়ে এতো চিন্তিত কেন?” উত্তরে আমি বললাম, দোস্ত শুধু আমার মা একা নন, বাংলাদেশের সকল মা-ই এখন তার সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত ও শঙ্কিত। অনেক দিন পরে পুরাতন বন্ধুর সাথে যোগাযোগে বেশ ভালই লাগল। মায়ের শংকার কারণ বুঝিয়ে বললাম বন্ধুকে।



বর্তমান সময়ে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, শিক্ষক, ছাত্র থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ কেউই গুম-খুনের আওতামুক্ত নয়। গুম-খুনের ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম না। এমন ঘটনা সব সরকারের আমলেই বিরাজমান ছিল। তবে আতঙ্কের বিষয় এর মাত্রা এখন পূর্বের যেকোন সরকারের আমলের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে গেছে।



আগের সময়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ খুন-গুমের আওতামুক্ত থাকলেও এখন তারাও নিরাপদ নেই। প্রায় প্রতিটি জেলা, উপজেলায় এখন খুন-গুমের ঘটনা ঘটছে। শহর ছাপিয়ে গ্রামাঞ্চলেও এখন খুন-গুমের ঘটনা ঘটায় বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের মায়েরা খুবই উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে মোবাইল, ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রামের মানুষও এখন আপডেট সংবাদের সাথে থাকছে সারাক্ষণ। ফলে যে কোন ঘটনা তাৎক্ষণিকভাবে সবাই জেনে যাচ্ছে। তাই বর্তমান সময়ের অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়া খুন-গুমের কারনে পরিবারের সদস্যরা বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত সবাই উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে।



কেন এই খুন-গুমের বৃদ্ধি : মানবাধিকার সংগঠনসহ অনুরুপ অনেক সংগঠন তাদের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ঘটনার সঠিক তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরে থাকেন। আমি নিতান্তই একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তেমন জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারবোনা-এটা ঠিক। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে নিজের মধ্যকার কিছু উপলব্ধি থেকে খুন-গুমের বৃদ্ধির কয়েকটি কারণ খুঁজে পেয়েছি। দেশের বিরোধী দলকে দমন করতে সরকারদলীয় ক্যাডার, প্রসাশনকে ব্যবহার করে খুন-গুমের খেলায় মেতে উঠেছে, এমন অভিযোগ গুম হওয়া পরিবার ও বিরোধী দলের। বিশেষ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আর্ন্তাজাতিক ট্রাইবুন্যালের দেয়া রায়ের প্রতিবাদে জামায়াত-শিবিরের রাজপথের আন্দোলন ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোরতা এক পর্যায়ে খুন-গুমে গিয়ে ঠেকেছে। সম্প্রতি সময়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের সাদা পোশাকধারী পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে কোথাও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছে, আবার কোথাও মেরে ফেলা হচ্ছে। পুলিশের বিপুল পরিমাণে অর্থ বাণিজ্য ও ক্রস ফায়ারের নাটকের ঘটনা প্রথম আলো পত্রিকাসহ দেশের অনেক পত্র-পত্রিকাতে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। আমার ধারণা প্রশাসনের লোকের বিপুল পরিমাণে অর্থ বাণিজ্যের খবরে উদ্বুদ্ধ হয়েই চাঙ্গা হয়ে উঠতে পারে ঘাপটি মেরে থাকা সন্ত্রাসীরা। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের দমনে ক্রসফায়ারসহ, অর্থ বাণিজ্যের ঘটনার কোনো তদন্ত বা বিচার না হওয়ায়, অর্থের নেশায় প্রসাশনের লোকই সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজশে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা তা ভেবে দেখা দরকার। আমার এ কথার যুক্তি- মানুষ এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শত্রু ভাবতে শুরু করেছে। প্রশাসনের লোক মানেই ভয়ঙ্কর কেউ, যেকোনো সময় সর্বনাশ করতে পারে, এমন ধারণা অধিকাংশের।



পরিত্রাণের উপায় : এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় সরকারের সদিচ্ছা। সরকার আন্তরিক ও সহনশীল হলে খুব দ্রুতই এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। সাদা পোশাকে গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতারকৃতদের ২৪ঘন্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি দোষারোপের রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। খুন-গুম অথবা নির্যাতনের শিকার মানুষকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জামায়াত না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাবতে শুরু করতে হবে। তাহলে সবার অন্তরে একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টি হবে। এতে খুন গুম অনেকাংশে কমে যাবে।




Disclaimer:

This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.

No comments:

Post a Comment