সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের তিন হাজার কোটি টাকা




 সারা দুনিয়া থেকে যখন সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় মোট গচ্ছিত অর্থ কমেছে, তখন বাংলাদেশ থেকে তা বেড়েছে। বেড়েছে ভারত থেকেও। ভারতের মতো বাংলাদেশ থেকেও পাচার হওয়া অর্থের একাংশ সুইস ব্যাংকে গিয়ে জমা হচ্ছে।

সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে ৬২ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ভারতীয়দের অর্থ বেড়েছে প্রায় ৪৫ শতাংশ।

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এতে দেখা যায় যে ২০১৩ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অন্তত ৩৭ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত রয়েছে, যা প্রায় ৪১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা তিন হাজার ১৬২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এটি আগামী অর্থবছরে ঘাটতি অর্থায়নের জন্য সরকার যে পরিমাণ প্রকৃত ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে, তার প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেেট নিট বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১২ সাল শেষে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অন্তত ২২ কোটি ৮৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত ছিল, যা প্রায় ২৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার বা এক হাজার ৯০৮ কোটি টাকার সমান। এটি সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের যে অর্থ গচ্ছিত রাখা হয়েছে, তার মোট পরিমাণ।

একই সময়ে, অর্থাৎ ২০১৩ সালে ভারতীয়দের ১৯৫ কোটি ২৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ২১৭ কোটি ৩২ লাখ ডলার গচ্ছিত রয়েছে। এটি ভারতীয় মুদ্রায় ১৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপি। ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩৪ কোটি সুইস ফ্রাঁ বা ১৪৩ কোটি ডলার। এটি ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় নয় হাজার কোটি রুপি। এর বাইরে গত বছর ভারতীয়দের সাত কোটি ৭০ লাখ সুইস ফ্রাঁ গচ্ছিত রাখা হয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো অর্থ গচ্ছিত নেই।

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোয় বিভিন্ন দেশের বিপরীতে ‘দায়’ অথবা ‘গ্রাহকের কাছে দেনা’ হিসাবের খাতে থাকা অর্থকে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক বা এসএনবি সংশ্লিষ্ট দেশগুলো থেকে রাখা গচ্ছিত অর্থ হিসেবে বিবেচনা করেছে। এতে দেখা যায়, গত বছর সারা দুনিয়া থেকে সুইস ব্যাংকগুলোয় গচ্ছিত অর্থের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি সুইস ফ্রাঁ বা এক লাখ ৪৮ হাজার কোটি ডলার। তার আগের বছর, ২০১২ সাল শেষে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ৪০ হাজার কোটি সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি ডলার৷ সে বিবেচনায় বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থ খুবই অল্প।

অবশ্য বাংলাদেশি বা অন্য কোনো দেশের নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান যদি নিজের বদলে অন্যের নামে কোনো অর্থ গচ্ছিত রেখে থাকে, তাহলে তা এই হিসাবের মধ্যে আসেনি। আর তাই এই হিসাব সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের পূর্ণ পরিমাণও নির্দেশ করে না। একইভাবে সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা মূল্যবান শিল্পকর্ম, স্বর্ণ বা দুর্লভ সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমান হিসাব করে এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেক দেশের নাগরিকই মূল্যবান শিল্পকর্ম বা দুর্লভ সামগ্রী সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকের ভল্টে রেখে থাকেন।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন জোরালোভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিটও গঠন করা হয়েছে। তাই অবৈধভাবে বাইরে অর্থ নিয়ে যাওয়া এখন খুব সহজ হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন দু-একটি দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।’

সালেহউদ্দিনের মতে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোও এখন আগের মতো কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করছে না। বরং গচ্ছিত অর্থের তথ্যাদির বিষয় কিছুটা শিথিল করেছে। তাই বাংলাদেশ সরকার চাইলে সুইস সরকারের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে পারে তথ্য বিনিময়ের জন্য। তিনি এ-ও বলেন, সুইস ব্যাংকে গচ্ছিত সব টাকাই পাচার হওয়া অর্থ নয়। কেননা, বিদেশে কর্মরত অনেক বাংলাদেশির বৈধ অর্থ সুইজারল্যান্ডে তাঁদের ব্যাংক হিসাবে জমা থাকে।

কোন বছর কত: সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩ সালেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি অর্থ গচ্ছিত ছিল। এর আগে সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত ছিল ২০০৭ সালে। সে বছর সুইস ব্যাংকসমূহে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ছিল ২৪ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা দুই হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। অবশ্য এ বছরই সুইস ব্যাংকসমূহের বৈশ্বিক গ্রাহকেরা সর্বোচ্চ দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি সুইস ফ্রাঁ বা প্রায় ২১৭ লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রেখেছিলেন।

২০০৮ সালে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ নেমে আসে ১০ কোটি ৭০ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ৮৯২ কোটি টাকায়। ২০০৯ সালে এটি কিছুটা বেড়ে হয় ১৪ কোটি ৯০ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা এক হাজার ২৪১ কোটি টাকা। ২০১০ সালে তা আরও বেড়ে হয় ২৩ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা এক হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। তবে ২০১১ সালে তা বেশ কমে হয় ১৫ কোটি ২৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা এক হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।




Disclaimer:

This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.

No comments:

Post a Comment