পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে টপকিয়ে ভারত এগিয়ে




পোশাক রফতানিতে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ আর এগিয়ে গেছে ভারত। বাংলাদেশকে টপকে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ভারত। জাতিসংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইউএন কমট্রেড থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বস্ত্রখাতে বিশ্ববাজারে ভারতের অংশীদারিত্ব এর আগের বছরের তুলনায় ১৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের প্রবৃদ্বির হার প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ভারতের পোশাক রফতানি হচ্ছে ৪০২০ কোটি ডলারের। চীন এখনও তাদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। শুধু তা-ই নয়, ভারত এ খাতে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ, ইতালি ও জার্মানির মতো দেশকে। গত ৩ জুন মঙ্গলবার এ খবর দিয়েছে মালয়েশিয়ার বার্তা সংস্থা বারনামা। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কাই প্রমাণিত হলো। পিছিয়ে গেলো বাংলাদেশ, এগিয়ে গেলো ভারত।



মালয়েশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামার রিপোর্টে আরও বলা হয়,  গত বছর বিশ্বব্যাপী বস্ত্রশিল্পে প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৪.৭ শতাংশ হলেও ভারতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২৩ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫.৪ শতাংশ। ২০১৩ সালে ভারতের বস্ত্রশিল্প খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল ২১.৮ শতাংশ। ভিয়েতনাম ব্যতীত শীর্ষ ৫ পোশাক রফতানিকারক দেশের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ভারতের অ্যাপারেল এক্সপোর্টস প্রোমশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বীরেন্দর উপল বলেন, আমাদের সব থেকে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে মন্দা ধীরে ধীরে কাটার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী বাজারে মন্থরগতি ও এর সঙ্গে মুদ্রাস্ফীতির মধ্য দিয়েও এখানে পৌঁছতে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করেছি। এক্ষেত্রে বাজার বহুমুখীকরণ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি আমাদের সহায়ক হয়েছে। এতে আমরা নতুন নতুন বাজার খুঁজে পেয়েছি। এতে লাভ হয়েছে প্রচুর। আমাদের কাঁচামালের সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা শর্ত মানার ক্ষেত্রে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছি। এতে আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতা ও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড এখন পোশাক কেনা বা তৈরির জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা এখান থেকে পোশাক তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠেছে।  ইউএন কমট্রেডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর বিশ্বে ৭৭ হাজার ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে। এর ৫.২ শতাংশ ভারতের। ভারতের বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা সম্ভব হয়েছে এ্যাপারেল অ্যান্ড ক্লোথিং খাত ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য। এছাড়াও ভারতে বস্ত্র রফতানি খাত গত বছর ৬ষ্ঠ স্থানে উঠে এসেছে- যা ২০১২ সালে ছিল অষ্টম অবস্থানে। ২০১২ সালে ভারতের পোশাক রফতানি হয়েছে ১২৯০ কোটি ডলার। এক বছরে তা বেড়ে ২০১৩ সালে হয়েছে ১৫৭০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাক সরবরাহে ভিয়েতনাম বাদে শীর্ষ পাঁচটি সরবরাহকারীর মধ্যে ভারতীয় তৈরি পোশাক খাতে ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এর পরিমাণ ২১.৮ শতাংশ।



১৯৭০ দশকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশে পোশাক রফতানির যাত্রা শুরু হয় । তারপর হাটি হাটি পা পা করে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে। বিগত কয়েক দশক ধরে বিশ্বে পোশাক রফতানিতে চীন শীর্ষস্থান দখল করে রাখে। বিগত ২০১২ সালে বাংলাদেশ অর্জন করে দেশ হিসেবে দ্বিতীয় স্থান। আর তুরস্ক তৃতীয় স্থান। কিন্তু ২০১৩ সালে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে আর ভারত পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নেয়। অবশ্য এবারও চীন তার শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের পোশাক রফতানি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ে। আর ভারত অনেক পিছন থেকে এক লাফে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে।



বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট মহল অনেকদিন থেকে বলে আসছিল বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। আর এ ষড়যন্ত্রকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়েছে বর্তমান আওয়ামী সরকারের প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি। এসব ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সময় পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ও ঠুনকো কারণে জ্বালাও পোড়াও মিছিল মিটিং করে এ খাতকে অশান্ত করে তোলা হয়েছে। আর তাই বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের প্রবৃদ্বির গতি বাড়ছে না বরং কমছে, অপরদিকে প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের প্রবৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাচ্ছে। অভিজ্ঞমহলের অভিযোগ বর্তমান সরকার বাংলাদেশের পোশাক শিল্প নিয়ে তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা নিচ্ছে না। বরং বর্তমান সরকারের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির কারণে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। তার পরিণামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পোশাক রফতানির বিশেষ সুযোগ জিএসপি সুবিধা বাতিল করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ পোশাক রফতানির একটি বড় বাজার হারায়। তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ইউরোপের বাজারে। এভাবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।



পোশাক খাতের সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির তুলনায় যেভাবে ভারত এগিয়ে যাচ্ছে তাতে একসময় দেখা যাবে গার্মেন্ট খাতটি হারিয়ে যাবে। গামেন্ট খাত শেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতিই হুমকির মুখে পড়বে। বিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় তথা ১৯৫০-১৯৬০ দশক পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম খাত ছিলো পাট শিল্প। পাট বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক ও ব্যবসায়ী এবং শিল্পপতিদের মুখে হাসি ফুটাতো, তাই তখন পাটকে বলা হতো সোনালী আশ।  ১৯৭০-র দশকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের পাট শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়া হয়।



আর প্রতিষ্ঠা লাভ করে ভারতের পাট শিল্প। আবার পাট শিল্পের মতো পোশাক শিল্পের জন্য এক অশনি সঙ্কেত দেখা যাচ্ছে। সরকার ও দেশের জনগণ যদি দ্রুত সজাগ না হয় তাহলে পাটশিল্পের মতো পোশাক শিল্পও হারিয়ে যাবে। তবে জনগণের চেয়ে সরকারকেই দেশের পোশাক শিল্পকে রক্ষা তথা এগিয়ে নেয়ার জন্য  ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি সরকারকে প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে।








Disclaimer:

This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.

No comments:

Post a Comment