ইরাকের পদচ্যুত সংসদ স্পিকার ওসামা আন
নাজিফি ও স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারাজানি
পরস্পরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা এক বিবৃতিতে তাদের ভাষায় 'ইরাকে
সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সংখ্যালঘু সুন্নি মুসলমানদের বৈধ দাবিগুলোকে' একই
পাল্লায় বিচার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরাক সরকার যখন দেশটিতে সন্ত্রাসীদের
ব্যাপক হামলা ও অভিযান মোকাবেলা করছে তখন দেশটির এই দুই কর্মকর্তা বাগদাদ
সরকারের সঙ্গে সুর না মিলিয়ে ভিন্ন সুরে কথা বলে পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসীদেরই
অবস্থান জোরদারের চেষ্টা করছেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আলকায়দার নতুন
সংস্করণ আইএসআইএল সম্প্রতি মসুল, তিকরিত ও কারকুকে হামলা চালিয়ে এইসব শহরের
বেশ কিছু অঞ্চলের ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পর সেখানে গণহত্যাসহ নানা
নৈরাজ্যের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
ইরাকের শিয়া ও সুন্নি আলেম সমাজ,
বিশেষ করে গ্র্যান্ড আয়াতুল্লাহ সিস্তানি এই সন্ত্রাসী তাকফিরি গোষ্ঠীদের
ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করার আহ্বান জানানোর পর দেশটির প্রায় ১৫ লাখ
বেসামরিক নাগরিক যুদ্ধ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী হয়েছেন এবং সরকারি সেনারা
নতুন উদ্যম নিয়ে স্থানীয় জনগণ ও স্বেচ্ছাসেবী গণবাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে নানা
অঞ্চল থেকে সন্ত্রাসীদের বিতাড়িত বা কোণঠাসা করতে শুরু করেছে।
সন্ত্রাসীদের প্রতি এ অঞ্চলের কিছু
আরব সরকারের ও বিশেষ করে সৌদি সরকারের সমর্থন সুস্পষ্ট। সৌদি আরবের ১৫০ জন
গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইরাকে ঢুকে এই দেশটিতে সক্রিয় রয়েছে বলে খবর এসেছে।
ইরাকে সন্ত্রাসীদের সাম্প্রতিক
উত্থানের ঘটনায় সাদ্দামপন্থী সাবেক বাথিস্টদেরও ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে এ
ক্ষেত্রে সাদ্দাম সরকারের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ্জাত আদদৌরার
নেতৃস্থানীয় ভূমিকাও লক্ষণীয়।
ইরাকের পদচ্যুত সংসদ স্পিকার ও তার
ভাই আসিল আন নাজিফি সন্ত্রাসীদের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখেছিলেন ও এখনও রেখে
যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। অতি সম্প্রতি তারা বাথিস্ট এবং
ওয়াহাবি-তাকফিরি সন্ত্রাসীদের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে সেই অভিযোগের
সত্যতাই প্রমাণ করলেন। সাবেক ইরাকি স্পিকারের ভাই ছিলেন নেইনাভা প্রদেশের
গভর্নর। এক নীল-নক্সার আওতায় কোনো কোনো ইরাকি সেনা কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে
বিনা বাধায় সন্ত্রাসীদের মসুল জয়ের ঘটনায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখেছিলেন
আসিল আননাজিফি।
নাজিফি ভ্রাতৃদ্বয় তথা নাজিফি নামের
এই দুই ভাই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ইরাকের নুরি আল মালিকি সরকারের নীতি
অবস্থান বাস্তবায়নে সহায়তা করলে সন্ত্রাসীরা সাম্প্রতিক বিপর্যয়গুলো ঘটাতে
সক্ষম হতো না।
উল্লেখ্য, দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার
দায়ে ইরাকের ফেডারেল আদালত এক রায়ে দেশটির সংসদ স্পিকার ওসামা আন নাজিফিকে
সংসদ থেকে বহিষ্কার করেছেন এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের তালিকা থেকে তার
নামও কেটে দিয়েছে। আর আদালতের এই রায় শোনার পর নাজিফি বাগদাদ ছেড়ে তুরস্কে
পালিয়ে যান।
স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলের
প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারাজানিও ইরাকের নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন বলেই নানা খবর এসেছে।
উল্লেখ্য, বারাজানির সঙ্গে কারকুকসহ
নানা অঞ্চলের মালিকানা নিয়ে বাগদাদের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধ নিষ্পত্তির
দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের কিছু অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে
ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে বারাজানি ওয়াদা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই বারাজানি এখন
বাথিস্ট ও তাকফিরি সন্ত্রাসীদের অনুকূলে অবস্থান নিয়েছেন।
সাম্প্রতিক এক খবরে জানা গেছে, মাসুদ
বারাজানি সম্প্রতি মুনাফিক গোষ্ঠী নামে কুখ্যাত ইরানের ইসলামী সরকার বিরোধী
নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রধান মারিয়াম রাজাভির সঙ্গে প্যারিসে বৈঠক
করেছেন। ওই বৈঠকে বারাজানি রাজাভিকে এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, নুরি আল মালিকি
যাতে তৃতীয় বারের মত ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হতে না পারেন সে জন্য তিনি সব
ধরনের প্রচেষ্টা চালাবেন।
তাই এটা স্পষ্ট সম্প্রতি কুর্দিস্তানের
প্রেসিডেন্ট বারাজানির সঙ্গে ইরাকের পদচ্যুত সংসদ স্পিকারের সাক্ষাৎ ও বৈঠক
ইরাকের নিরাপত্তা বিরোধীদের একই ষড়যন্ত্রের সুতোয় গাঁথা একটি পদক্ষেপ।
বারাজানি ও নাজিফিও তাদের অশুভ মতলব হাসিলের জন্য শিয়া-সুন্নি বিরোধের
কার্ড ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। তারা এমন সময় সন্ত্রাসী তৎপরতা ও সুন্নিদের
বৈধ দাবির মধ্যে পার্থক্য করার দাবি জানালেন যখন ইরাকের সুন্নি সমাজের
আপামর জনতা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের দিকে সাহায্যের হাত
বাড়িয়ে দিয়েছেন। ইরাকের সুন্নি আলেমরাও আইএসআইএল-এর তৎপরতাকে সন্ত্রাসী
তৎপরতা বলে অভিহিত করেছেন এবং সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে সরকারকে সহযোগিতা
করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
Disclaimer:
This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.
No comments:
Post a Comment