প্রাচীন সভ্যতার দেশ মিসর। নীলনদ আর পিরামিড তার অনন্য বৈশিষ্ট্য।
খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে ইসলাম মিসরের একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে কাজ
করে আসছে। আমর ইবন আল-আসের নেতৃত্বে মুসলিম সেনাদল মিসর জয় করে। উমাইয়াও
আব্বাসীয় আমলে মিসর ছিল মুসলিম সাম্রাজ্যের অধীন। অনেক উত্থান-পতন, আর
বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে রচিত মিসরের ইতিহাস।
মিসরে ১৮৫০-১৯৫২ পর্যন্ত
রাজতন্ত্র, ১৯৫৩-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসন। ১৯৫৭-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত
গামাল আবদেল নাসেরের একদলীয় শাসন। ১৯৭৭-২০১২ সাল স্বৈরশাসক হোসেন মোবারক
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ৩০ বছরের এই স্বৈরশাসকের
পতন হয় ২০১১ সালে। অনেক রক্তপাত আর শহীদের রক্তের মিনিময়ে দীর্ঘ ৮৪ বছর পর
জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতা লাভ করে ইখওয়ান তথা মুসলিম ব্রাদারহুড,
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ড. মোহাম্মদ মুরসি ।
অনেক চড়াই-উত্রাইয়ের
মধ্য দিয়ে ইখওয়ান আজকে এ পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের
আগে সংগঠনটি মিসর ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও প্রভাব বিস্তার লাভ করে। ব্রিটিশ
বিরোধী আন্দোলন শুরু করলে দলটির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। মাত্র দু’বছরের মধ্যে
পঁচিশ লাখ কর্মী বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বৈরাচারী সরকার আরও ভীত হয়ে পড়ে। ১৯৩৬
খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইখওয়ান সর্বাত্মকভাবে আরবদের সহযোগিতা করে।
একদিকে তীব্র ব্রিটিশ বিরোধিতা, অপরদিকে আরব ও ফিলিস্তিনের স্বার্থের
প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের কারণে ইখওয়ান আরব বিশ্বে ব্যাপক বিস্তার লাভ
করে। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে পর থেকে নানা মিথ্যা অভিযোগে অনেকবার সংগঠনটিকে
বেআইনি ঘোষণা করে মিসরের স্বৈরাচারী সরকারগুলো। ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুুয়ারি
অজ্ঞাত এক বন্দুকধারীর গুলিতে হত্যা করা হয় হাসান আল বান্নাকে। ১৯৫৪ সালে
গামাল আবদেল নাসেরের ওপর আক্রমণের অভিযোগ এনে দলটি নিষিদ্ধ করা হয়। হাজার
হাজার ইখওয়ানের নেতাকর্মীকে জেলে পুরা হয়। এর থেকে বাদ যায়নি সাইয়্যেদ
কুতুবও। গ্রেফতারের পর তার হাতে পায়ে শিকল পরানো, মারপিট আর
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে কামড়ানো হতো। রাতে তালাবদ্ধ আর দিনের বেলা
তাকে রীতিমত প্যারেড করানো, মাথায় খুব গরম এবং ঠাণ্ডা পানি ঢালা ছিল
হিংস্রতার জঘন্যতম রূপ। এভাবেই চলতে থাকে ইখয়ানের নেতা-কর্মী আর মহিলাদের
উপর অমানবিক ও পৈশাচিক জুলুম-নির্যাতন। বিশ হাজারেরও বেশি লোককে গ্রেফতার
করা হয়েছিল। এদের মধ্যে প্রায় সাতশ’ ছিলেন মহিলা। কিন্তু কোনোকিছুই তাদের
দমাতে পারেনি।
সাইয়্যেদ কুতুব ও অন্যান্য আসামি ১৯৬৬ সালের জানুয়ারি ও
ফেব্রুয়ারি মাসে বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনালের দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের সভাপতি আসামিদের কোনো কথার প্রতিই কান দেননি। ইংরেজি ১৯৬৬
সালের আগস্ট মাসে সাইয়্যেদ কুতুব ও তার দু’জন সাথীকে সামরিক ট্রাইব্যুনালের
পক্ষ থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। সারা দুনিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
কিন্তু স্বৈরাচারী সরকার কোনো কিছুর প্রতি তোয়াক্কা না করে ২৫ আগস্ট ১৯৬৬
সালে ওই দণ্ডাদেশ কার্যকর করে। ইখওয়ানের শীর্ষস্থানীয় প্রভাবশালী নেতা
সাইয়্যেদ কুতুব শুধু ইসলামের রাজনৈতিক বিশ্বাসের কাছে নয়, গোটা বিশ্বে
ইসলাম বিষয়ে একজন পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ১৯৮১ সালে ইসরাইলের
সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে বিক্ষুব্ধ সৈনিকের হাতে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার
সাদাত প্রাণ হারানোর পর তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক প্রেসিডেন্ট
নির্বাচিত হন। সে সময় থেকে যে জরুরি অবস্থা তিনি জারি করেছিলেন তা ৩০ বছর
ধরে চলে। ইখওয়ানের রাজনৈতিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে হোসনি মোবারকের দমনমূলক
কর্মকাণ্ড পশ্চিমা দেশগুলো পুরোপুরি অবগত ছিল। গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ
কিংবা নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কখনো পশ্চিমারা মোবারকের সরকারের
সমালোচনা বা চাপ প্রয়োগ করেনি। বরং তারা ইসলামপন্থী দলটির ওপর নির্যাতনকে
সমর্থন জুগিয়েছে। আজও জনগণের ভোটে নির্বাচিত ড. মুরসির সরকারকে অত্যন্ত
অন্যায় ও অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতাচ্যুত্ করার পর পশ্চিমারা তাদের প্রতিবাদ
আর উদ্বেগের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ রাখবে এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ
তেলসমৃদ্ধ মধ্যপাচ্যে যে আরব বসন্তের সূচনা হয়েছে, তা এর মধ্যে তিউনেসিয়াসহ
আশপাশের সব রাষ্ট্রগুলোতে ইখওয়ানের আদর্শে বিশ্বাসীদের বিজয় পশ্চিমাদের
মৌলবাদ ভীতির আশঙ্কাকে আরও ঘনীভূত করছে এবং করবে।
মিসরে ইখওয়ান বা
মুসলিম বাদ্রারহুড মানুষের হৃদয়ের সংগঠন। বিগত মোবারক পতন আন্দোলনে ইখওয়ান
কর্মীদের তত্পরতা ও আত্মত্যাগ জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাছড়া
নির্বাচনের আগে নতুন একটি রাজনৈতিক প্লাটফরম (ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস
পার্টি) ও ইশতেহারের নীতিমালা সুশাসন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন,
কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ নারী ও অমুসলিমদের অধিকারের ইত্যাদির প্রতি
বিশেষ গুরুত্ব আরোপও কপটিক খ্রিস্টানদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক স্থাপন, জনগণের
মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত করেছে। আর এসব পজিটিভ ম্যাসেজই পার্লামেন্ট
নির্বাচনে বিপুল সংখ্যায় ইখওয়ানের সংসদ সদস্য ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এবং
জনগণ ড. মুরসিকেও নির্বাচিত করেছে।
কিন্তু মাত্র এক বছর সময় পার না
হতেই মাত্র চারদিনের রাজপথে সেক্যুলারিস্টদের আন্দোলনের অজুহাত দেখিয়ে
জনগণের সেই কাঙ্ক্ষিত নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত্ করা হয়। এভাবে
ক্ষমতাচ্যুত্ করা কতটুকু বৈধ!! কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের মধ্যে
উদ্বেগ ছাড়া আর কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। অবশ্য পশ্চিমাদের নিকট এর বেশি
প্রত্যাশা করাটাও বেমানান। কারণ গণতন্ত্র, মানবাধিকার মৌলবাদীদের জন্য নয়।
এজন্য হেনরি কিসিঞ্জার একবার বলেছিলেন, ‘আমরা মুসলমানদের সব কর্মকাণ্ড সহ্য
করলেও মৌলবাদীদের কোনো রাষ্ট্রে ক্ষমতায়নকে মেনে নেব না। তা যতই
গণতান্ত্রিক পন্থায় হোক না কেন। ড. মুরসির বিদায়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনা,
প্রতিক্রিয়া আব্যাহত। মুরসির দল মুসলিম বাদ্রারহুডের নেতাকর্মী, সাধারণ
জনগণ ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলো এখন রাজপথে জীবনবাজি রেখে লড়াই করছে
শান্তিপূর্ণভাবে। তারা যতটুকু ক্ষুব্ধ তার প্রতিবাদে সহিংসতা নয়, বরং
রাজপথে অবস্থান আর শাহাদাতের নজরানা পেশের মধ্য দিয়ে তার প্রতিবাদ করছে
এখনও। সামনে কি হবে তা এখনও বলার সময় আসেনি। এর মধ্যেই সেনাবাহিনী দু’ভাগে
বিভক্ত হয়ে গেছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন মিসরের সদস্যপদ স্থগিত করেছে। তবে এই
মুহূর্ত পর্যন্ত এতটুকু বলা যায় জনগণ বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকভাবে ছেড়ে দেবে
বলে মনে হয় না। একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত্ করার ব্যাপারে
যেগুলোকে অজুহাত হিসেবে পেশ করা হয় তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য! মুরসির
ব্যর্থতা—বেকারত্ব দূর, জ্বালানি ও বিদ্যুত্ সমস্যার সমাধান করতে না পারা।
একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য এক বছর
সময় তাকে ক্ষমতাচ্যুত্ করার কোনো মানদণ্ড হতে পারে কি? তাই যদি হয় ক্ষমতায়
থাকার মানদণ্ড, তাহলে আমাদের দেশে শেখ হাসিনার সরকারের পাহাড়সমান ব্যর্থতার
দায়ে কত আগে বিদায় নেয়া দরকার ছিল। আসলে ড. মুরসির বিদায়, সেনাবাহিনীর
ক্ষমতা দখল আর সেক্যুলারিস্টদের আন্দোলন এবং ইসরাইল, আমেরিকার স্বার্থ একই
সূত্রে গাঁথা। কারণ ড. মুরসি নির্বাচিত হওয়ার পর সেনাবাহিনী তার হাতে
ক্ষমতা তুলে দিতে অনেক গড়িমসি করেছে। পশ্চিমারা ও সেনাবাহিনী
সেক্যুলারিস্টদের ক্ষমতায় বসাতে প্রথম থেকেই ছিল মরিয়া। মূলত জনগণের চাপে
সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে ড. মুরসিকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে সত্য। কিন্তু যে
কোনো সময় সেনাবাহিনী ইখওয়ানের এবং মুরসির উপর ছোবল মারতে পারে এই সন্দেহ
ছিল শুরু থেকেই প্রবল। তাছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে পার্লামেন্ট পুনরায় আহ্বান
করা নিয়ে ঠাণ্ডা লড়াই চলছে প্রথম থেকে। নতুন সংবিধান রচনা ও সেনাবাহিনী
নিজেদের বাজেট নির্ধারণ যুদ্ধ ঘোষণা ও সেনাবাাহিনী পরিচালনার কর্তৃত্ব
পুরোপুরিভাবে তাদের হাতে রেখে দিয়েছে। সাংবিধানিক আদালতকে প্রেসিডেন্টের
ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান ও পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে নতুন অনেক
চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইসরাইল ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও
ইউরোপীয় দেশগুলো নতুন সরকারের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
ইসরাইলের পর মিসরের সেনাবাহিনী সর্বাধিক মার্কিন সাহায্য পেয়ে থাকে।
ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা না রাখা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা
দিয়েছে। কারণ হামাসের সঙ্গে ব্রাদারহুডের রয়েছে আত্মিক সম্পর্ক। মুরসি শপথ
গ্রহণের পর কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে
বলেছিলেন—‘ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে।’ ড. মুরসির এই
ঘোষণাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি ইসরাইল ও আমেরিকা।
ইউরোপ-আমেরিকা সবাই ড.
মুরসিকে অভিনন্দন জানালেও তাদের প্রত্যেকেরই মুসলিম ব্রাদারহুডের লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা ছিল। তাছাড়া ইসরাইলের জন্য হুমকি এমন কোনো কিছুকেই
আমেরিকা বরদাশত করবে না। নির্বাচনী রায়কে পাশ্চাত্যের শাসক ও নীতি
নির্ধারকরা প্রথমেই চায়নি। যেহেতু নির্বাচনে তাদের তাঁবেদার গোষ্ঠী বিজয়ী
লাভ করতে পারেনি, তাই বসে থাকেনি সেক্যুলারিস্টরা। সেই চিত্রটি ফুটে উঠেছে
২০১২ সালের ২৭ জুন তারিখে লন্ডনের ‘দি ইভনিং স্ট্যান্ডার্ড’ নামক একটি
দৈনিকে প্রকাশিত ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের লেখা এক
প্রবন্ধে। মি. ব্লেয়ারের মনোভাব বিশ্ব মোড়লদের চিন্তার একটি প্রতিচ্ছবি এতে
সন্দেহ নেই। উক্ত প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, One thing, however, is for
sure. It has huge consequences for us in the West. This is not just
about oil and energy. .. But the security issues alone, arising out of
this upheaval, are momentous. অর্থাত্ ‘একটি বিষয় অতি সুনিশ্চিত।
পাশ্চাত্যে আমাদের জন্য (মধ্যপ্রাচ্যের এ বিপ্লব) বিশাল প্রভাব ফেলবে। সেটি
শুধু তেল বা জ্বালানির ক্ষেত্রে নয়। শুধু নিরাপত্তার ক্ষেত্রেই এ
বিপ্লব-উদ্ভূত পরিস্থিতির ফলাফলটি হবে অতি ব্যাপক।’ এর মাধ্যমে টনি ব্লেয়ার
ও তার পাশ্চাত্যের মিত্ররা মধ্যপ্রাচ্যের বিপ্লবে নিরপেক্ষ নন। মিসরে
তাদের একটি ঘনিষ্ঠ মিত্র রয়েছে। তাদের পরাজয়ে তিনি যে দুঃখী এবং তাদের
একাকী ছেড়ে দেয়া যে পাশ্চাত্যের জন্য ঠিক হবে না সে পরামর্শটিও তিনি
দিয়েছেন খুব খোলামেলাভাবে।। তিনি লিখেছেন, “Remember that in Egypt, yes,
the Muslim Brotherhood won a majority. But the outcome was close. There
are a lot of worried liberal-minded people there who believe in more
secular democracy as we do in the West. They should not be forgotten.”
অর্থাত্ ‘স্মরণ করুন যে, মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
কিন্তু ফলাফলটি অতি কাছাকাছির। সেখানে রয়েছে উদার মনের বহু মানুষ যারা
সেক্যুলার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে যেমনটি আমরা পাশ্চাত্যে বিশ্বাস করি।
তাদের ভুলে থাকা যাবে না।’ টনি ব্লেয়ার লিখেছেন, But it must now reinforce
the idea that democracy is a way of thinking, not just of voting.
অর্থাত্ ‘এ ধারণাটিকে অবশ্যই বলিষ্ঠ করতে হবে যে গণতন্ত্রের অর্থ শুধু
ভোটদান নয় বরং চিন্তা-চেতনার একটি ধরন।’ আমার মনে হয় মিসরের ব্যাপারে
পশ্চিমাদের মনোভাব জানার জন্য আর কোনো বয়ান দেয়ার দরকার আছে কি? আজ প্রশ্ন
দেখা দিয়েছে, মুসলমানদের ক্ষেত্রে পশ্চিমারা গণতান্ত্রিক পন্থায়
নির্বাচিতকে আদৌ ইনসাফের রায় মনে করে কি? সমসাময়িক পৃথিবীতে তার প্রমাণ
দুরূহ। আলজারিয়ায় মুসলিম স্যালভেশন ফ্রন্টের বিজয়ের পরও ক্ষমতার কেন্দ্রে
তাদের আসীন হতে দেয়া হয়নি। মিসরের ক্ষেত্রেও কি একই নীতি কার্যকর হচ্ছে?
মুসলিম বাদ্রারহুডের বিজয় শোষিত, বঞ্চিত আর অবহেলিত গোটা মুসলিম উম্মাহর
জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছিল। আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে সেক্যুলারিস্টদের
ষড়যন্ত্র কূটকৌশল আর সেনাবাহিনীর অ-গণতান্ত্রিক হস্তক্ষেপে সোনালি সূর্য
অস্তমিত হওয়ায় বিশ্বেব্যাপী মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে আঘাত হেনেছে এতে সন্দেহ
নেই। তবে মুসলিম বাদ্রারহুডের উচিত হবে সবকিছুকে ষড়যন্ত্র দিয়ে বিবেচনা না
করে নিজেদের ভুল নির্ণয় ও আগামীর কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে বীরের মতো
এগিয়ে যাওয়া। এরই মধ্য দিয়ে অস্তমিত সূর্য আবার উদিত হবে। সেটি দেখার
অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে সারা পৃথিবীর সত্যপন্থীরা।
লেখক: ড. মু হা ম্ম দ রে জা উ ল ক রি ম
No comments:
Post a Comment