মহাকাশের আবর্জনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা




ময়লা-আবর্জনা সবারই অপছন্দের একটি বিষয়৷ কেননা সেখান থেকে যেমন দুর্গন্ধ
ছড়ায় তেমনি রোগজীবাণুও৷ ইদানিং মহাকাশে থাকা আবর্জনা নিয়ে চিন্তিত দেখা
যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের৷


পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রায় হাজার খানেক স্যাটেলাইট বা
কৃত্রিম উপগ্রহ৷ এছাড়া রয়েছে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস৷ এগুলো
সবই কাজের জিনিস৷ তবে কিছু অ-কাজের বস্তুও মহাকাশে ঘুরঘুর করছে৷ যেটা আদতে
সমস্যা তৈরি করছে৷ অচল স্যাটেলাইট বা রকেটের ধ্বংসাবশেষগুলোই হচ্ছে
মহাকাশের আবর্জনা৷


এতদিন বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা তেমন একটা না ভাবলেও এখন সেটার সময় এসে গেছে৷ কারণ বেড়ে গেছে আবর্জনার সংখ্যা৷



আবর্জনার পরিমান


‘ইউএস স্পেস সার্ভিলেন্স নেটওয়ার্ক' এর কাজ হলো মহাকাশের আবর্জনার খবর
রাখা৷ সাধারণত যেসব ময়লার ব্যস ও দৈর্ঘ্য ১০ সেন্টিমিটারের মতো হয় সেগুলোই
চিহ্নিত করতে পারে এই নেটওয়ার্ক৷ তাদের হিসেবে, ২০০৬ সালে এ ধরণের আবর্জনার
সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার৷ যেটা এ বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজারে৷
অর্থাৎ প্রায় ছয় হাজার নতুন আবর্জনার জন্ম হয়েছে মাত্র পাঁচ বছরে৷ তবে অন্য
আরেক হিসেবে, মহাকাশে প্রায় ২২ হাজার ময়লার টুকরো রয়েছে যেগুলো পৃথিবী
থেকেই দেখা যায়৷



আবর্জনার কারণ


কিন্তু আবর্জনার সংখ্যা এত বেড়ে গেল কেন? বিজ্ঞানীরা এজন্য দুটি
দুর্ঘটনার কথা বলছেন৷ এর মধ্যে প্রথম দুর্ঘটনাটি অবশ্য ইচ্ছাকৃত বলা যায়৷
কারণ ২০০৭ সালে চীন তাদের তৈরি একটি অ্যান্টি-স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র
পরীক্ষা করে দেখার জন্য সেটিকে আরেকটি অচল স্যাটেলাইটের দিকে ছুঁড়ে
মেরেছিল৷ এতে ঐ ক্ষেপণাস্ত্র ও স্যাটেলাইট প্রায় দেড় লক্ষ টুকরায় পরিণত হয়
এবং সেগুলো মহাকাশেই থেকে যায়৷ এই টুকরোর অনেকগুলোই আকারে এতো ছোট যে
সেগুলো দেখতে পায়না ঐ ইউএস স্পেস সার্ভিলেন্স নেটওয়ার্ক৷


এছাড়া ২০০৯ সালে সচল একটি কমিউনিকেশন্স স্যাটেলাইট ও রাশিয়ার একটি অচল স্যাটেলাইটের মধ্যে সংঘর্ষ হয়৷ এতেও তৈরি হয় অনেক আবর্জনা৷


এসব বিষয়ে কাজ করেছেন ডোনাল্ড কেসলার৷ তিনি নাসা'র একজন সাবেক বিজ্ঞানী৷
১৯৭৮ সালে এক প্রতিবেদনে তিনি বলেছিলেন, মহাকাশে একটি ময়লার উপাদান
আরেকটির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আবর্জনার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়৷



 একটি গবেষণা

ডোনাল্ড কেসলার সম্প্রতি একটি গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ যুক্তরাষ্ট্রের
‘ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল'এর হয়ে করা সেই গবেষণা প্রতিবেদনে মহাকাশের
আবর্জনার বিষয়ে নাসা'কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে৷ কারণ প্রতিবেদন বলছে,
বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মহাকাশ ক্রমেই স্পেসক্রাফটের চলাচলের জন্য
ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকতে পারে৷ এ অবস্থা থেকে
মুক্তি পেতে নাসা'কে অতি শীঘ্রই কৌশল ঠিক করারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷


গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ময়লার টুকরোগুলো ঘন্টায় সাড়ে ১৭ হাজার মাইল
বেগে মহাবিশ্বের চারদিকে ঘুরছে এবং এগুলো যদি কোনো মহাকাশযানে গিয়ে আঘাত
করে তাহলে স্পেসক্রাফট ফুটো হয়ে যেতে পারে৷ যেমন গত জুন মাসে একবার
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস অল্পের জন্য ময়লার টুকরোর সঙ্গে
সংঘর্ষের হাত থেকে বেঁচে যায়৷ সেসময় আইএসএস'এ ছয়জন নভোচারী ছিলেন৷ ঘটনা
বুঝতে পেরে তাঁরা কোনোরকমে নিরাপদ জায়গায় চলে যেতে পেরেছিলেন৷ পরে
নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন৷


সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মহাকাশে নাকি ৪০টিরও বেশি আবর্জনার টুকরো রয়েছে
যেগুলোর ওজন তিন টনেরও বেশি হবে৷ এগুলো সচল থাকা স্যাটেলাইটে যে কোনো
ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে৷



সম্ভাব্য উপায়


এ সম্পর্কে ডারপা'র একটি পরামর্শ ভেবে দেখা যেতে পারে বলে গবেষণায় বলা
হয়েছে৷ ডারপা হচ্ছে ‘ডিফেন্স এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি' যেটি
পেন্টাগনের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক থিংক-ট্যাঙ্ক৷ ডারপা বলছে, আবর্জনা ধরার
জন্য হারপুন, জাল বা ছাতার মতো যন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, যার উদ্দেশ্য
হবে আবর্জনাগুলোকে আরও বেশি করে পৃথিবীর দিকে ঠেলে দেয়া বা আরও উঁচু কোনো
নিরাপদ কক্ষপথে ঠেলে দেয়া৷


এছাড়া আবর্জনা পরিষ্কার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনও পরিবর্তনের পরামর্শ
দেয়া হয়েছে৷ কারণ বর্তমান আইন অনুযায়ী, এক দেশ আরেক দেশের ফেলে দেয়া
স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতে পারেনা৷


Disclaimer:

This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.

No comments:

Post a Comment