গৃহবন্দি চার সৌদি রাজকন্যার জীবন বিপন্ন




সৌদি রাজা আবদুল্লাহর গৃহবন্দি মেয়েদের মধ্যে দু'জন জানিয়েছেন, খাবার ও পানি ফুরিয়ে আসায় তাদের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে।





১৩ বছর ধরে জেদ্দা শহরে গৃহবন্দি
রাজকন্যাদের মধ্যে সাহার ও জাওয়াহের সংবাদ মাধ্যম আরটি-কে জানিয়েছেন, তারা
মেয়াদ-উত্তীর্ণ খাবারসহ যা-ই পাচ্ছেন তাই খাচ্ছেন। সৌদি রাজার চার কন্যা
দেশটির নারী সমাজ ও রাজবন্দিসহ জনগণের ওপর নিপীড়ন ও দারিদ্র সম্পর্কে
রাজতান্ত্রিক সরকারের সমালোচনা করে আসছেন।  




গৃহবন্দি এই চার রাজকন্যার মধ্যে অন্তত একজন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।




কয়েকদিন আগে ৩৮ থেকে ৪২ বছর বয়স্ক এই
রাজকন্যাদের একজন তার বাবার সরকারের বিরুদ্ধে গণ-বিদ্রোহ শুরু করতে সৌদি
জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাহার নামের ওই রাজকন্যা এক
ভিডিও-বার্তায় সরকারের হাতে বন্দি সৌদি আলেম আয়াতুল্লাহ নিমার আল নিমারের
প্রতি সমর্থন ও সরকারি নিপীড়নে শহীদ সৌদি বন্দিদের প্রতি সালামও জানান।




সাহার ও জাওয়াহের আরটি-কে আরো বলেছেন,
"আমাদের বিরুদ্ধে কোন্ অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তা আমরা জানতে চাই।...
আমাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে এবং বিশ্বের যে কোনো স্থানেই মানুষকে বন্দি
করে রাখা অপরাধ।" 




এর আগে তারা আরো জানিয়েছেন, তাদেরকে
কোনো পাসপোর্ট বা পরিচয়-পত্র দেয়া হয়নি এবং তাদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আনাও
নিষিদ্ধ করেছেন রাজা আবদুল্লাহ।  




ওই রাজকন্যারা বলেছেন, "তারা তাদের
ব্যাপারে কথিত মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিক্রিয়া
দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন। "





রাজা ও তার পুত্রদের পরিচালিত নির্যাতন বন্ধ করার জন্য এইসব সংস্থা সোচ্চার হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।




গত এপ্রিল মাসে নিউইয়র্ক পোস্টকে দেয়া
এক সাক্ষাৎকারে সহোদরা চার সৌদি রাজকন্যা বলেছিলেন তারা পানিশূন্যতায়
ভুগছেন। তাদের কক্ষে পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ প্রায়ই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়
এবং তা কয়েকদিন ও কখনও বা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।




সৌদি রাজা আবদুল্লাহ ১৯৭০-এর দশকে এই
রাজকন্যাদের মা আলনুউদ আল ফায়েজকে বিয়ে করেছিলেন। সে সময় জর্দানীয় এক ধনী
পরিবারের বংশোদ্ভূত ফায়েজের বয়স ছিল মাত্র ১৫। ফায়েজ আরটি-কে আরো বলেছেন,
"আমার মেয়েদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং তা করা
হচ্ছে কখনও তার ভাইদের দিয়ে ও কখনও তার বাবা নিজেই তা করছেন।" 




সৌদি রাজা আবদুল্লাহর স্ত্রীর সংখ্যা
ত্রিশ জনেরও বেশি এবং এইসব স্ত্রীর গর্ভে জন্ম নিয়েছে ৪০ জনেরও বেশি
সন্তান। আবদুল্লাহর সঙ্গে ফায়েজের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয় ১৯৮০'র দশকে। ফায়েজ
২০০১ সালে লন্ডনে চলে যান এবং ২০০২ সাল থেকে তার কন্যাদের ওপর শুরু হয়
আবদুল্লাহর নির্যাতন। এই রাজকন্যারা তাদের মাকে জানিয়েছেন যে তাদের খাবারে
ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়া হয়। সৌদি আরবে নারীদের অবৈধভাবে বন্দি করার
বিরুদ্ধে এই রাজকন্যারা যখন সোচ্চার হয়ে ওঠেন তখন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে এই
ব্যবস্থা নেয়া শুরু হয়।




ফায়েজ গত মার্চ মাসে তার কন্যাদের
মুক্ত করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আবেদন
জানিয়েছিলেন। সে সময় ওবামা সৌদি আরব সফর করেছেন।




সৌদি সরকার এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে
বলেছে, জেদ্দায় চার রাজকন্যাকে দেহরক্ষী সঙ্গে রাখার শর্তে অবাধে ঘুরে
বেড়ানোর অনুমতি দিয়ে রাখা হয়েছে।


৬ মে (রেডিও তেহরান)


No comments:

Post a Comment