মোদী ঝড়ের পেছনে মুসলমান ভোটাররা!




ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মুসলমানরা কোন দিকে ভোট দেবেন তা নিয়ে নানা মহলে নানা জল্পনা ছিল। সব দলই মুসলমান ভোট ব্যাঙ্কের দিকে তাকিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় জনতা পার্টি মুসলমান ভোট নিজেদের দিকে টানতে উঠেপড়ে লেগেছিল। তবে ভোটের ফল প্রকাশের পর এই বিষয়টিই চর্চ্চায় এসেছে যে, এবার কি মুসলমানদের একটা বড় অংশ  সমস্ত ভয় ভীতিতে দূরে সরিয়ে রেখে নরেন্দ্র মোদীকেই ভোট দিয়েছেন ? তাই যদি না হবে তাহলে মুসলমান প্রধান এলাকা বা কেন্দ্রগুলিতেও বিজেপির বিপুল ভোটে জয়লাভ কিভাবে সম্ভব হল ?

উত্তর প্রদেশে এক তৃতীয়াংশ লোকসভা আসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় মুসলমান ভোট। ২০০৭ এবং ২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন মুসলমান ভোটাররা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ২০০৯ সালের  লোকসভা ভোটে বিজেপিকে হারাতে উত্তর প্রদেশের মুসলিম ভোটাররাই কংগ্রেস, বিএসপি এবং এসপি প্রার্থীদের ভোট দিয়েছিলেন।

এবার উত্তরপ্রদেশে নতুন বিন্যাস দেখা গেছে।  উত্তরপ্রদেশে মুসলমান ভোটারদের কথা মাথায রেখেই বিজেপি সেখানে ৫০টির বেশি আসন পাবে না মনে করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে রাজ্যের ৮০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ৭৩টিতেই বিজেপি জয়ী হয়েছে। আর এর মধ্যে ২৫-৩০ আসনে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। কিছুদিন আগেই দাঙ্গা হয়েছে যে মুজফফরনগরে সেই কেন্দ্রেও বিজেপি জয়ী হয়েছে সবাইকে অবাক করে দিয়ে। 



ভোট বিশেষজ্ঞদের মতে, মুসলমান ভোটারদের ভোট না পেলে এটা কিছুতেই সম্ভব হত না। বিহারেও সেই একই ছবি। সেখানেও বিজেপি এমন অনেক কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে যেখানে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা ২১ থেকে ২৮ শতাংশ। নওদা, গয়া, আওরঙ্গাবাদ, পূর্ব চম্পারণের মত কেন্দ্রগুলিতে মুসলমানদের সংখ্যা ২১ থেকে ২৫ শতাংশ। অথচ এই সব কেন্দ্রগুলিতেও বিজেপি জয়লাভ করেছে ভাল ভোটের ব্যবধানে।



জম্মু ও কাশ্মীরের মত মুসলমান প্রধান রাজ্যেও বিজেপি এবারই প্রথম তিনটি আসন পেয়েছে। অবশ্য সেটা সম্ভব হযেছে হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রভাবিত এলাকায়। আসামেও অনেক মুসলমান প্রভাবিত কেন্দ্রে বিজেপি জয় লাভ করেছে। আর সেটা যে মুসলমানদের ভোট না পেলে সম্ভব হত না সেটা অঙ্কই বলে দিচ্ছে। একটি উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে বিষয়টি। আসামের নওগা কেন্দ্রে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা ২২ শতাংশ। অথচ এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়েছেন বিশাল ভোটের ব্যবধানে। গুজরাটের মত রাজ্যে যেখানে দাঙ্গার ক্ষত এখনও রয়েছে বলে অভিযোগ পাওযা গেছে সেখানেও বিজেপি সব কটি আসন দখল করেছে।



ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৫-১৬ শতাংশই মুসলমান। পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে সেই সংখ্যাটা প্রায় ২৯ শতাংশ। লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪৬টি আসনে মুসলমান ভোটারদের সংখ্যা তিরিশ শতাংশ বা তার বেশি। ৩৮টি আসনে ২১ থেকে ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটার। দেশের প্রায় ১১০টি আসনে মুসলমান ভোটাররাই প্রার্থীদের ভাগ্য নির্ধারণে বড় রকমের ভুমিকা পালন করে। এছাড়া ১৪৫টি আসনে মুসলমান ভোটারের সংখ্যা ১১ থেকে ২০ শতাংশ। ১৮৩টি আসনে মুসলমান ভোটার ৫ থেকে ১০ শতাংশ । পাঁচ শতাংশের কম মুসলমান ভোটার রয়েছে ১৪২টি আসনে।

সুতরাং মুসলমান ভোটাররা যে ভারতের নির্বাচনে একটা উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে সেটা সকলেই জানে। কিন্তু এবার সারা দেশে বিজেপি যে ২৮৩টি আসনে জয়ী হয়েছে সেগুলির অর্ধেকের কাছাকাছি আসনে মুসলমান ভোটারদের প্রভাব রয়েছে। বিজেপির সামনে তাই মুসলমান ভোটারদের অভিমুখ তাদের দিকে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ ছিলই। কিন্তু কিভাবে সেই চ্যালেঞ্জকে সামাল দিযেছে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। মোদীর উন্নয়নের স্বপ্নে কি মুসলমানরাও আস্থা রেখেছেন ? প্রশ্ন উঠছে, এবারের লোকসভা নির্বাচনে মুসলমান ভোটের নতুন কোনও বিন্যাসের ফলেই কি মোদী ঝড়ের সুষ্টি হয়েছে ?  সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ প্রথম থেকেই কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দিয়ে এসেছে। কিন্তু কংগ্রেসের পক্ষে থাকা  ট্রাডিশনাল মুসলমান ভোটার যে কংগ্রেসের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে চলেছে তা  মুসলমান অধ্যুষিত এলাকার সমীক্ষাতে ধরা পড়েছিল। সেই ভোটের একটা বড় অংশ সমাজবাদী পার্টি বা বহুজনসমাজ পার্টির দিকে যাবে বলে অনেকে মনে করেছিলেন। মুসলমানদের ধর্মীয় নেতারাও মোদী সম্পর্কে বারে বারে সতর্ক করে দিযেছিলেন। তা সত্ত্বেও এবারই প্রথম মুসলমানরা সংকীর্ণতার উর্ধে উঠে মোদীর উন্নয়নের ডানায় ভর করতে চেয়েছেন। আর তাই মুসলমান ভোটের একটা বড় অংশ এবার বিজেপির দিকে ঝুঁকেছে বলে জানা যাচ্ছে।



পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বামদের দিকেই মুসলমান ভোট দীর্ঘ দিন ধরে আস্থা প্রকাশ করেছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর মুসলমানদের আস্থা অর্জনে মমতা নানা ঘোষনা দিযেছেন। মুসলমান ধর্মগুরুদেরও মমতা পাশে ডেকে নিতে পেরেছেন। আর তার ফলেই মুসলমানরা এবার পুরোপুরি বামদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। ফলে সহজেই তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪টি আসনে জয়লাভ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।


Disclaimer:

This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.

No comments:

Post a Comment