গত দু’দিনে দু’শর বেশি ট্যাংক বিধ্বংসী গোলা বা রকেট ,একটি রকেট লঞ্চার, দু'শোর মতো চার্জার, পাঁচটি মেশিনগানও এর কিছুু ব্যারেল উদ্ধার হয়েছে |
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে হবিগঞ্জের সাতছড়ি এলাকায় সীমান্তবর্তী গভীর জঙ্গলে
র্যাবের আজকের অভিযানেও বেশকিছু অস্ত্র,গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। তবে, গত
দুদিনে উদ্ধার করা এসব অস্ত্র কাদের জন্য বা কারা এনেছে, সে ব্যাপারে
র্যাব এখনও কিছু বলতে পারছে না।
ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের চার কিলোমিটার ভিতরে চুনারুঘাট
উপজেলার সাতছড়ির পাহাড়ি জঙ্গলে র্যাব তাদের অভিযান অব্যাহত রাখছে।
র্যাব বলেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঐ অঞ্চলে চারদিন ধরে অনুসন্ধান
চালিয়ে তিনটি টিলায় সাতটি বাংকারের খোঁজ পায় তারা। আর এই বাংকার থেকে বিপুল
পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রের দেখা পায় গতকাল।
আজও সেখান থেকে মেশিনগান এবং কামান বিধ্বংসী গোলাসহ অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব বলেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঐ অঞ্চলে
চারদিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে তিনটি টিলায় সাতটি বাংকারের খোঁজ পায় তারা। আর
এই বাংকার থেকে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্রের দেখা পায় গতকাল।
এখন সেখানে একটি সুড়ঙ্গ এবং ইউনিফরম ও কিছু কাগজপত্র পাওয়া গেছে। |
হবিগঞ্জের বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদের উৎস
কী এবং এর সঙ্গে জড়িত নেপথ্যের ব্যক্তি কারা, তা এখনো জানা যায়নি৷ তবে
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হতে পারে৷
২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়ে৷ তদন্তে ঐ অস্ত্র ভারতীয়
বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম' বা উলফার বলে
প্রমাণ হয়৷ এর সঙ্গে জড়িতদের বাংলাদেশের আদালত মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে
কারাদণ্ড দেন৷
এর আগে ২০০৩ সালে বগুড়ায় গুলি এবং অস্ত্রের বড় একটি চালান ধরা পড়ার পর তার
তদন্তে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছিল৷ তখনই জানা যায় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের সাতছড়ি সংরক্ষিত বনাঞ্চল অস্ত্রপাচার এবং
চোরাচালানের জন্য ব্যবহার করত৷ এই এলাকা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা
থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে৷ এই গুলি ও অস্ত্রের সঙ্গে ‘ন্যাশনাল লিবারেশন
ফোর্স অব ত্রিপুরা' বা এনএলএফটি এবং উলফা জড়িত ছিল বলে তখনকার তদন্তে বেরিয়ে আসে৷
সাতছড়ি বনাঞ্চলেই একসময় ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘অল ত্রিপুরা টাইগার
ফোর্স' বা এটিটিএফ-এর সদর দপ্তর ছিল বলে জানা গেছে৷ উলফা তাদের অস্ত্র ও
গোলাবারুদ পরিবহণ, পাচার ও চোরাচালানে এটিটিএফ-এর সাতছড়ি বনাঞ্চলের ঘাটি
ব্যবহার করত৷
২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিটিএফ-এর প্রধান রণজিত দেববর্মণকে ভারতের কাছে
হস্তান্তর করে৷ ভারতের ত্রিপুরার আদালতে একাধিক মামলায় এখন রণজিত
দেববর্মণের বিচার চলছে৷ তাঁর সঙ্গে উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়ার ঘনিষ্ঠতা ছিল৷
২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনায় পরেশ বড়ুয়াকে আদালত
মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন৷ উলফার এই অস্ত্রের চোরাচালান মামলায় সেই সময়ের
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দু'জন মন্ত্রী এবং সামরিক ও বেসামরিক কয়েকজন
শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারও শাস্তি হয়েছে৷
অতীতে সাতছড়ি বনাঞ্চলকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ উলফা, এটিটিএফ এবং এনএলএফটি তাদের ট্রেনিং ক্যাম্প হিসেবেও ব্যবহার করত৷
মঙ্গলবার সাতছড়ি বনাঞ্চল থেকে র্যাব ২৫০টি অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট, সমপরিমাণ
চার্জার, ২০০ মর্টার সেল এবং ১১ হাজার গুলি ও গোলাবরুদ উদ্ধারের পর
বুধবারও অভিযান চালায়৷ বুধবারের অভিযানে আরো ৮টি অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট এবং
১৮৪টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে৷ পাওয়া গেছে একটি সুরঙ্গ৷ সাতছড়ি বনে মোট
সাতটি বাংকারের খোঁজ পাওয়া গেলেও অস্ত্র গোলাবারুদ পাওয়া গেছে একটি
বাংকারে৷
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, ‘‘বাংকারগুলো
কমপক্ষে এক বছর আগে তৈরি করা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়৷ আর অস্ত্র ও
গোলাবারুদ পলিথিনে মোড়ানো ছিল৷ এখানে ত্রিপুরাকে স্বাধীন করা কেন প্রয়োজন
তা নিয়ে লেখা একটি পুস্তিকাও পাওয়া গেছে৷ তবে এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক বা
গ্রেফতার করা যায়নি৷''
তিনি জানান, ‘‘আমরা এখনো এইসব আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদের উৎস সম্পর্কে
জানতে পারিনি৷ জানতে পারিনি কারা এখানে এগুলো রেখেছে৷'' তদন্তে সব বেরিয়ে
আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.)
জানান, ‘‘চট্টগ্রাম এবং বগুড়ায় এর আগে উদ্ধার করা অস্ত্র এবং গোলাবারুদের
সঙ্গে হবিগঞ্জের অস্ত্র এবং গোলাবরুদের মিল আছে৷ এগুলো সামরিক অস্ত্র৷
এরমধ্যে রকেট লঞ্চার ছাড়াও বিমান বিধ্বংসী মেশিনগানের গুলিও আছে৷ আর এ থেকে
সহজেই বোঝা যায় এগুলো ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের৷''
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তি
হওয়ার ফলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এখন আর বাংলাদেশের মাটিতে ঠাঁই পায় না৷
এর আগে তাদের অস্ত্রের চালান আটক ও শীর্ষ কয়েকজনকে গ্রেফতার করায় তারা
চাপে পড়ে বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও আস্তানা গেড়েছে৷ তাঁর মতে, তারা সরে
গেলেও তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ সরাতে পারেনি৷ হবিগঞ্জের গোলাবারুদ কমপক্ষে ৪/৫ বছরের পুরনো বলেই মনে হয়৷
এই নিরাপত্তা বিশ্লেষকের ধারণা বাংলাদেশের সিলেট এবং পার্বত্য এলাকার গভীর বনে এধরণের আরো মজুদ করা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ থাকতে পারে৷
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) বলেন, ‘‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা
বাহিনীর সতর্কতা ও তৎপরতার কারণেই হবিগঞ্জে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার
হয়েছে৷ এই তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে৷''
সুত্র: DW.DE, BBC
Disclaimer:
This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.
No comments:
Post a Comment