উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করার সবচেয়ে সহজ হাতিয়ার হলো কলগার্ল বনে যাওয়া! টেলিভিশন ও সিনেমার পরিচালক-প্রযোজকের লোভনীয় অভিনয়ের সুযোগ বাস্তবায়ন করতে, মডেল হওয়ার খায়েশ পূরণ করতে, শখের বসে এমনকি উচ্চবিত্ত গৃহবধূ একাকিত্ব দূর করতে তার বন্ধুর মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ে এই ধরনের পেশায়। তবে শুধু টাকার অভাবে এই পেশায় নাম লিখিয়েছে এমনটি শোনা যায়নি।
কলগার্ল সুমা (ছদ্ম নাম) জানান, তার স্বামীর অন্য সম্পর্ক ছিল। সে অনেক চেষ্টা করেও তাকে না ফেরাতে না পেরে জিদের বসে নিজে এমন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। কলগার্লরা নেটওয়ার্কে ঢোকেন বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সিনেমা-টেলিভিশন পরিচালক-প্রযোজক, বিউটি পার্লার, ড্যান্স স্কুল এবং অন্যান্য লোকজনের মাধ্যমে।
বাড়তি রোজগারের লোভে, ভাল ক্যারিয়ারের আশায়, কারোর কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে কিংবা স্বামীর অবহেলায় ক্লান্ত হয়ে, প্রেমে ব্যার্থ হয়ে, নামকরা মডেল বা অভিনেত্রী হওয়ার আশায় এই শহরে গোপনে গোপনে ‘কলগার্ল’ হয়েছেন অনেকেই। এই পেশায় সিনেমা-টেলিভিশনের অভিনেত্রী থেকে শুরুু করে উঠতি গায়িকা, উচ্চাকাঙ্ক্ষী মডেল ছাড়াও আছেন মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারের বিবাহিত-অবিবাহিত মেয়েরা। এদের অনেকেই আবার সমাজে পরিচিত।
অর্থাৎ তারকা হিসেবে তাদের খ্যাতি রয়েছে। এসব তারকাদের যে কোন প্রোগ্রাম আয়োজনে থাকে কঠোর গোপনীয়তা। আর এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে এজেন্ট কর্তৃপক্ষ। আর ক্লায়েন্টের তালিকায় আছেন মূলতঃ ব্যবসায়ীরা।
বিদেশী ক্লায়েন্টদেরও মনোরঞ্জন করে থাকেন ঢাকার কলগার্লরা। যাদের কাঁচা টাকা ওড়াতে কোন বাধা নেই, কেবল তারাই কলগার্লদের নিয়ে মেতে ওঠেন কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার এই জমকালো আয়োজনে। তবে সাধারণ মানুষও যে নেই, তাও নয়। তবে সে সংখ্যা একেবারেই হাতে গোণা।
কলগার্ল হওয়ার পাশাপাশি এদের অন্য একটা পরিচিতিও রয়েছে। সেই পরিচিতিই এদেরকে সমাজে আড়াল করে রাখে। কেউ স্টুডেন্ট, কেউ বিউটিশিয়ান, কেউ ম্যাসিউজ, কেউ প্রাইভেট টিউটর, কেউ বুটিক চালান, কেউ অভিনেত্রী। আছেন গৃহবধূরাও। এরা যেন চেনামুখের আড়ালে অচেনাজন।
যারা ঢাকার কলগার্ল-
# এরা কোনও নির্দিষ্ট পতিতালয় নির্ভর নন।
# এরা চলমান মহিলা যৌনকর্মী। একা বা কোন এজেন্ট দ্বারা নিজেদের পরিচালিত করেন।
# প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম (যৌনকর্ম) আয়োজনে থাকে গভীর গোপনীয়তা। সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই কিংবা তিনটি প্রোগ্রামে অংশ নেন একজন কলগার্ল।
# প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ হোটেল, রিসোর্ট, প্রাইভেট ফ্ল্যাট ও ম্যাসেজ পার্লারে।
# এরা সকলেই শিক্ষিত এবং বাংলা-ইংরেজিতে পারদর্শী। এছাড়াও কেউ কেউ হিন্দিতেও অনর্গল কথা বলতে পারেন।
# এদের বেশিরভাগ উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। উচ্চাভিলাসী মধ্যবিত্তের সংখ্যাও কম নয়। বাইরের থেকে দেখে কোনভাবেই বোঝা যাবে না এরা কলগার্ল।
# বেশিরভাগই এ পেশার বাইরেও অন্য কাজ করে থাকেন, যেখান থেকে আয়-রোজগারও যথেষ্ট।
কাদের ডিমান্ড এখানে-
জানা যায়, ক্লায়েন্টদের কাছে কম বয়সী স্কুল এবং কলেজের মেয়েদের চাহিদা বেশি। ফলে এই সব এসকর্ট এজেন্সিগুলোর নজর থাকে ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলের সাথে সাথে স্বনাম ধন্য ঢাকার স্কুল কলেজগুলোর দিকে। এসকর্ট এজেন্টগুলো বিভিন্নভাবে ফাঁদ পেতে স্কুল-কলেজের মেয়েদের কৌশলে কলগার্লের খাতায় নাম লেখিয়ে নিচ্ছে। অর্থের লোভ দেখিয়ে নতুন নতুন মেয়েদের নেটওয়ার্কে নিয়ে আসতে পারঙ্গম এরা। তবে এরা পতিতালয়ের তথাকথিত ‘পিম্প’ বা দালালদের মতো নয়।
এসকর্ট এজেন্সি এবং কলগার্ল-
ঢাকার এসকর্ট এবং কলগার্ল এখন একে অপরের পরিপূরক শব্দ। বৈধতার সনদ দেখিয়ে এরা প্রকাশ্যে কলগার্ল বিজনেস চালিয়ে যাচ্ছে। ক্লায়েন্টদের আকৃষ্ট করতে কলগার্ল বিষয়ে যাবতীয় তথ্য, ছবি এবং কলগার্লের রেট দিয়ে ওয়েব সাইটের মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। দেশের বাইরে থেকেও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কলগার্ল বুকিং দেয়া যায়। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে- এসব ওয়েব সাইটে তরুণীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কথা বলে নতুন নতুন কলগার্ল হওয়ার জন্য আহ্বান রয়েছে।
সেই সাথে ক্লায়েন্ট এবং কলগার্লদের জন্য যাবতীয় নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখার কথা ওয়েব সাইটের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ঢাকার এসকর্ট এজেন্সিগুলোর প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব কলগার্ল ডেটাবেজ।
ছবিসহ এসব ডেটাবেজে গ্রাহক হওয়ার মাধ্যমে প্রবেশ করা যায়। আবার সব কলগার্লের ছবি ওয়েবে থাকে না। কারণ স্টার কিংবা সেলিব্রেটি কলগার্লরা ওতটা প্রকাশ্যে প্রচার হতে রাজী হয় না।
চাহিদা মতো এসকর্টের কলগার্ল পেতে কায়েন্টকে বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হয়। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- এসকর্ট এজেন্সিকে ক্লায়েন্টের পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর প্রদান, যোগাযোগের জন্য একটা কন্ট্যাক্ট নম্বর (মোবাইল/টেলিফোন), কোন হোটেলে এসকর্ট আয়োজন করতে চাইলে তা কমপক্ষে থ্রীস্টার হোটেল হতে হয় এবং ফ্যাটের ক্ষেত্রেও হতে হয় মানসম্মত। ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, ঢাকা এসকর্ট এজেন্সি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত।
ঢাকা ভিত্তিক এইভাবে উন্মুক্ত কলগার্ল ব্যবসাকে বৈধ বলে দাবি করেন এসকর্ট কর্তৃপক্ষ। ঢাকা এসকর্টের আজাদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কলগার্লের এই বিজনেস প্রফেশনালি বৈধভাবে করে থাকেন তারা।
আর এ প্রতিবেদক নিজেকে একজন ক্লায়েন্ট হিসেবে পরিচয় দিলে তাদের বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে মেইল করেন। আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কলগার্লদের রেট যৎসামান্য কমতে পারে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা এসকর্টের ওয়েব সাইটে দেখা যায়, ফেডারেল লেবেয়িং এন্ড রেকর্ড কিপিং ল’ (১৮ ইউএসসি ২২৫৭) অনুযায়ী তাদের কার্যক্রম বৈধ এবং কর্তৃপক্ষ অনুমোদিত। কিন্তু একাধিক আইনজীবীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই আইনের দোহাই দিয়ে যৌন ব্যবসা বৈধ করার কোন সুযোগ নেই।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসকর্ট এজেন্সি খুলে কলগার্ল ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ গুলশান জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনভাবেই যৌন ব্যবসা বৈধ হতে পারে না। উলেস্নখিত আইনের কথাও এর আগে শোনেননি বলে জানান তিনি। আর ওয়েব সাইটের মাধ্যমে একেবারে প্রকাশ্যে এই ধরনের যৌনব্যবসা চলছে শুনে তিনি বিস্মিত হন।
Disclaimer:
This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.
No comments:
Post a Comment