লাতিন ফুটবলের অন্যতম প্রতিভূ আর্জেন্টিনা দুই ম্যাচে জয়ী হয়ে উঠে গেছে ‘হাউজ অব সিক্সটিনে’। শেষ ম্যাচ আজ। এবার তাদের প্রতিপক্ষ সেই চিরচেনা আফ্রিকার ফুটবল পরাশক্তি নাইজেরিয়া। আর্জেন্টিনা ৬ এবং নাইজেরিয়া ৪ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে। আর্জেন্টিনা চাইছে এই ম্যাচে নাইজেরিয়াকে পরাজিত করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে। অন্য দিকে নাইজেরিয়ার স্বপ্ন এই খেলায় আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করে গ্রুপ শীর্ষ হওয়া। তবে হেরে গেলে তাদেরকে অনেক হিসাব-নিকাশের মধ্যে পড়তে হবে।
আর্জেন্টিনা প্রথম ম্যাচে বসনিয়াকে ২-১ এবং ইরানকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে। তবে তাদের খেলা মন ভরাতে পারেনি। মেসি দু’টি নান্দনিক গোল করেছেন ঠিকই। তবে ম্যারাডোনার দেশটিকে তাদের চিরচেনারূপে দেখা যায়নি। বাছাই পর্বে তাদের দাপটের ধারাবাহিকতা দেখে বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন আর্জেন্টিনার হাতে রয়েছে দুনিয়া কাঁপানো আক্রমণভাগ। হিগুয়েন, অ্যাগুয়েরো, ডি মারিয়া এবং সবার ওপরে থাকা মেসি। তাদের মধ্যে মেসির উপস্থিতি হঠাৎ আলোর ঝলকানির মতো দেখা গেলেও ডি মারিয়া, অ্যাগুয়েরো কিংবা হিগুয়েনকে তেমন উজ্জ্বলভাবে দেখা যায়নি। যদিও মারিয়া জানিয়েছেন, তাদের দুই সেরা স্ট্রাইকার হিগুয়েন অ্যাগুয়েরো ইনজুরিতে। তাই তারা তাদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছেন না। বসনিয়া ও ইরানের বিপক্ষে এই দুইজনকে নি®প্রভ মনে হয়েছে।
এ ছাড়া আর্জেন্টিনা তাদের চিরায়ত ঐতিহ্যিক স্টাইলকে মাঠে দেখাতে পারছে না। ছোট ছোট পাস। শিল্পকে ধারণ করে এগিয়ে চলা এবং মাঝমাঠ দিয়ে হঠাৎ করেই দ্রুতগতিতে আক্রমণ করা। কিন্তু দুই ম্যাচেই আর্জেন্টিনার সেই ম্যাচের ধারা দেখা যায়নি। বসনিয়ার সাথে চেষ্টা করেছে তারা। তবে ইরানের শক্তিশালী ডিফেন্সের সামনে অনেকটা অসহায় মনে হয়েছে মেসি বাহিনীকে। ম্যাচের শেষ মিনিটে মেসির আচমকা মাপা শটে গোল না হলে হয়তো ড্র হয়ে যেত ম্যাচ। আজকে আর্জেন্টিনা তাদের ছন্দময় খেলা খেলে নাইজেরিয়াকে চাপে রাখবে। সুন্দর ফুটবল খেলাটা আর্জেন্টিনার কাছে প্রধান বিষয়। ঈর্ষণীয় স্ট্রাইকিং জোন নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় প্রতিপক্ষের ওপর। সুন্দর খেলার পাশাপাশি গোলও করতে হবে স্ট্রাইকার জোনকে। তাই কোচ হিগুয়েন এবং অ্যাগুয়েরোর বিকল্প হিসেবে লাভেজ্জি ও পালাসিওর কথা মাথায় রেখেছেন।
তাদের তিনি ইরানের বিপক্ষে মাঠে নামিয়েছেন। মাঝমাঠে দীর্ঘদেহী নাইজেরিয়ার ফুটবলারদের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা তাদের টেকনিক দিয়ে প্রাধান্য বিস্তার করতে চাইবে। ফলে ডি মারিয়াকে আরো গতিময় হতে হবে। মাসকেরানো, পাবলো জাবালেতা, গাগো, রোজা কিংবা ফ্রেডরিককে তাদের সেরাটা দিয়ে আর্জেন্টিনাকে এক দলে পরিণত করতে হবে। শুধু মেসির দিকে চেয়ে থাকলেই হবে না। তাকে সহায়তাও করতে হবে। যদিও কোচ সাবেলা বলেছেন, মেসির মতো একজন তারকা ফুটবলার থাকলে যেকোনো ম্যাচের চরিত্র বদলে যেতে পারে। বসনিয়া ও ইরানের বিপক্ষে মেসি যে ম্যাজিক মুহূর্ত নির্মাণ করেছিলেন আজো কি তা দেখা যাবে। যদিও আর্জেন্টিনার সমর্থকেরা মেসির ম্যাজিক মোমেন্ট দেখার জন্য আশা করে আছে। সাবেলা একটা বিষয়ে তেমন চিন্তিত নন। তা হলো তার দলের কারো তেমন বড় কোনো ইনজুরি সমস্যা নেই। সবাই পুরোপুরি ফিট।
নাইজেরিয়ার সামনে এক কঠিন পরীক্ষায় তাদের পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার মুখোমুখি তারা। বসনিয়ার সাথে জয় পাওয়ার পর তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার স্বপ্ন দেখছে। আর্জেন্টিনার সাথে ড্র করতে পারলেই তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে এবং ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর আবার তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠবে। নাইজেরিয়া ২০০২ এবং ২০১০ বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল। গ্রুপ পর্বে তারা সবার নিচে ছিল। গত বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া পরাজিত হয়েছিল গ্রিসের কাছে। স্টিফেন কেশি কোচ হিসেবে আসার পর ২০১৩ সালে নাইজেরিয়া জয় করে আফ্রিকান নেশনস কাপ। এবার সুপার ঈগলরা দ্বিতীয় রাউন্ডের কাছাকাছি। দলে আছেন জন ওবি মাইকেল। তিনি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে চমৎকার নৈপুণ্য দেখাচ্ছেন। এ ছাড়া ওগেনাই ওনজি চার ডিফেন্সের একজন, যিনি দলকে সব সময় শক্ত অবস্থানের ওপর দাঁড় করাতে চান। নাইজেরিয়ার সেরা তারকা অবশ্য ওদেমউইঙ্গি।
এই স্ট্রাইকার দলের হয়ে দৃষ্টিনন্দন কারিশমা দেখাচ্ছেন। এমনকি গোলও করেছেন। তিনি পাসিংয়ের ক্ষেত্রে ৯১ ভাগ সফল এবং গোলের সুযোগও সৃষ্টি করেছেন। ইমানিকের সাথে যৌথভাবে আক্রমণ রচনা করতে ভালোবাসেন ওদেমউইঙ্গি। তবে নাইজেরিয়ার ভিক্টর মোজেস এবং গডফ্রে ওরোয়াবোনি ইনজুরিতে পড়েছেন। তাদের কোচ অবশ্য আশা করছেন যে, তারা দুইজন আজ খেলতে পারেন।
নাইজেরিয়া ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম বসনিয়াকে পরাজিত করে জয়ের মুখ দেখল। ফ্রান্স বিশ্বকাপের পর এবার তারা দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারে। ব্রাজিল বিশ্বকাপে নাইজেরিয়া এখন পর্যন্ত কোনো গোল খায়নি। আর্জেন্টিনা এর আগে নাইজেরিয়ার সাথে ৬ বার মুখোমুখি হয়। এর মধ্যে চারবার জয়ী হয় আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা ইতোমধ্যে শেষ ১৬-তে উঠে গেছে। তবে নাইজেরিয়ার সাথে তারা পরাজিত হলে গ্রুপে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে।
নাইজেরিয়া দুর্দান্ত খেলেছে বসনিয়ার সাথে। তারা গোলও পেয়েছে। তারা কাউন্টার অ্যাটাকে বসনিয়াকে গোল দিয়েছিল। সেই একই ধারায় খেলে তারা আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করতে চায়। তবে মেসি এমন একজন ফুটবলার যিনি দুই দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। ফলে আর্জেন্টিনাই ম্যাচে প্রাধান্য বিস্তার করবে এবং ২-১ গোলে জয়ী হবে।
Disclaimer:
This post might be introduced by another website. If this replication violates copyright policy in any way without attribution of its original copyright owner, please make a complain immediately to this site admin through Contact.